মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাস যে খারাপ কোনও জিনিস তা নয়, তবে বদঅভ্যাস না থাকাই শ্রেয়। সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঠিক কীভাবে পাঁচটি পন্থা অনুসরণ করে বদঅভ্যাসের জাল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক ধাপগুলো সম্পর্কে-
১. কমিয়ে আনুন দুশ্চিন্তার মাত্রা
এক গবেষণা্য় উঠে এসেছে, মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকলে ধূমপান কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে। এর কারণ হচ্ছে, মস্তিষ্কে সে সময় ডোপেমেইন নামক একটি কেমিক্যাল কাজ করা শুরু করে যা ক্ষণিকের জন্য মানুষকে দুশ্চিন্তার হাত থেকে রেহাই দেয়। কিন্তু বিষয়টি স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভাল নয়, উল্টো ক্ষতিকর। আর তাই গবেষকদের পরামর্শ হচ্ছে ধূমপান বা মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণের পরিবর্তে ঘুমানোর সময় বাড়িয়ে দেওয়া, ভালো গান শোনা, ব্যয়াম করা। এতে করে ক্ষণিকের জন্য নয় নয়, বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্যই কমবে দুশ্চিন্তা।
২. অভ্যাসের কারণ সম্পর্কে জানুন
প্রতিটি অভ্যাসের তিনটি পর্যায় থাকে- কারণ, নিয়ম, পুরস্কার। আপনি যদি আপনার বদঅভ্যাসের প্রথম ধাপটি সম্পর্কে অবহিত থাকেন, তাহলে বদঅভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি অনেকটাই সহজ হয়ে আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি একটি কাজ পুনরায় তখনই করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, যখন আপনি তা এর আগেও করেছেন এবং সাময়িক আনন্দ পেয়েছেন। সেজন্য গবেষকরা জানিয়েছেন, যে অভ্যাসটি ত্যাগ করতে চাচ্ছেন, সেটির কারণ সম্পর্কে জানুন। তাহলে অভ্যাস ত্যাগ করার রাস্তাটি সহজ হয়ে আসবে অনেকটাই।
৩. গড়ে তুলুন ভালো কোনও অভ্যাস
বদঅভ্যাসটির পরিবর্তে ভালো কোনও অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর বদঅভ্যাস মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠতে চাইলেই তা দমন করুন ভালো অভ্যাসের মাধ্যমে। তবে মনে রাখবেন, কাজটি সহজ নয়। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধূমপানের কথা। ধরে নেওয়া যাক, আপনি ধূমপায়ী এবং সে অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছেন। এখানে ভালো অভ্যাস হিসেবে গড়ে তুলুন, চুইংগাম চিবানো বা চকোলেট জাতীয় কিছু খাওয়া। যখনই বদঅভ্যাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে তখনই ভালো অভ্যাসটি প্রয়োগ করুন। গবেষকদের মতে, এ পন্থাটি ভালো কাজে দেয়।
৪. অভ্যাস ত্যাগের যুক্তিসংগত কারণ খুঁজে বের করুন
গবেষকরা জানিয়েছেন, কেন অভ্যাসটি ত্যাগ করতে চাইছেন, তার একটি দৃঢ় একটি যুক্তিসংগত কারণ খুঁজে বের করুন। এতে করে আপনি নিজেই নিজেকে সামলে রাখতে পারবেন অনেকটা। যুক্তিসংগত কারণের মধ্যেই খুঁজে পাবেন অভ্যাস ত্যাগের প্রেরণা। কারণ যখন দেখবেন, অভ্যাসটি আদতে ভালো কিছু বয়ে আনেছে না আপনার জন্য, তখন আপনি আক্ষরিক অর্থেই তা মন থেকে ত্যাগ করতে চাইবেন।
৫. লক্ষ্য তৈরি করুন
একবারেই অভ্যাস ত্যাগের চিন্তা না করে, স্বল্পমেয়াদী সময়সীমা নির্ধারণ করুন। এই সময়সীমা হতে পারে কয়েক ঘন্টা বা কয়েক মাস, সম্পূর্ণ বিষয়টিই আদতে নির্ভর করছে আপনার ওপর। সময়সীমা নির্ধারণের পর সেগুলোকে লক্ষ্য হিসেবে নিন এবং পূরণ করার চেষ্টা করুন। গবেষকদের মতে, এতে করে নিজের সঙ্গেই একটি মানসিক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় এবং স্বল্পমেয়াদী হয় বলে অধিকাংশ মানুষ সহজে ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে। এভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে থাকুন, দেখবেন একটি সময় অভ্যাস ত্যাগের জন্য আর মনের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে না।